Thursday, January 11, 2018

বিড়াল মা

মাকে মোটেই পছন্দ নয় দুই বোনের।
কারণ ওদের মা একটা বিড়াল। কেমন
করে ওদের মা বিড়াল হলো, ওরা
জানে না। মায়ের সঙ্গে কাউকে
পরিচয় করিয়েও দিতে পারে না। কী
লজ্জা! কী লজ্জা!
একদিন ছোট বোনটা বলল, চল একটা নতুন
মা খুঁজি।
বড় বোনও রাজি। ব্যস, নতুন একটা মা
খুঁজতে বেরিয়ে গেল দুই বোন। কিন্তু
চাইলেই কি নতুন মা পাওয়া যায়?
দেখা যাক।
দিনটা ছিল বড্ড গরম। মাথার ওপর গনগনে
সূর্য। চারদিকে ঝাঁ ঝাঁ রোদ। গা যেন
পুড়ে যাচ্ছে।
বড় বোন বলল, সূর্যের দিকে তাকাও। কী
সুন্দর দেখাচ্ছে সূর্যটাকে! আচ্ছা,
সূর্যটাকেই মা বানিয়ে নিলে কেমন
হয়?
দারুণ! ছোট বোন রাজি।
সূর্যকে ডাক দিল দুই বোন, তুমি কি
আমাদের মা হবে?
দুই বোনের দিকে তাকাল সূর্য। কী সুন্দর
ফুটফুটে মেয়ে! আবদার শুনে হাসল সূর্য।
বলল, তোমাদের মতো অমন সুন্দর দুটো
মেয়ের মা হতে পারলে আমি খুশিই
হতাম। কিন্তু তোমরা আমাকে যেমন
ভাবছ, আমি তেমন নই। সব সময় তোমাদের
সঙ্গে যে থাকতে পারব না?
জানতে চাইল দুই বোন, কেন?
সূর্য বলল, রাতের বেলা তো আমাকে
চলে যেতেই হবে। তখন তোমরা মা
পাবে কোথায়?
দুই বোন বলল, রাতে তো আমরা ঘুমিয়েই
থাকব। তখন মা না থাকলেও চলবে। শুধু
দিনের বেলা চাই।
সূর্য বলল, ওই যে দেখো মেঘ। কালো
মেঘ। ওই মেঘ যখন আমাকে ঢেকে দেয়,
তখন তোমরা মা পাবে কোথায়? আমার
চেয়ে কালো মেঘই তোমাদের
যত্নআত্তি করতে পারবে। তোমরা বরং
তাকেই বলো মা হতে।
ঠিক ঠিক। সায় জানাল দুই বোন। এবার
দুই বোন আবদার জানাল কালো মেঘের
কাছে, তুমি খুব সুন্দর কালো মেঘ।
আমাদের চুলের মতো কুচকুচে কালো।
সূর্যের চেয়েও তুমি শক্তিশালী। তুমি
আমাদের মা হবে?
কালো মেঘ বলল, উহু। তোমরা আমায়
যেমন শক্তিশালী ভাবছ, আমি মোটেও
তেমন নই। আমি নিজে নিজে চলতে
পারি না। বাতাস আমাকে যখন
যেখানে ধাক্কা দেয়, সেখানেই
যেতে হয় আমাকে। তোমরা বরং
বাতাসকেই মা বানাও। সে ঠিক
তোমাদের যত্ন করতে পারবে।
ঠিক ঠিক। সায় জানাল দুই বোন। এবার
বাতাসের কাছে আবদার জানাল,
আমাদের মা হবে?
বাতাস বলল, উহু। তোমাদের মা হওয়ার
জন্য আমার চেয়ে শক্তপোক্ত কাউকে
দরকার। তোমরা বরং ওই পাহাড়কেই
তোমাদের মা বানাও। আমি কখনোই
ওই পাহাড়ের ওপারে যেতে পারিনি।
সব সময় আটকে যাই।
ঠিক ঠিক। এবার গেল পাহাড়ের
কাছে। আর্জি জানাল, ওহে পাহাড়,
আমরা জানি তুমি অনেক শক্তপোক্ত। তুমি
কি আমাদের মা হবে?
পাহাড় বলল, মিষ্টি মেয়েরা, তোমরা
ঠিকই ধরেছ। আমি বিশাল! কিন্তু আমি
যে অসহায়।
অসহায়! অবাক দুই বোন। এত বড় পাহাড়ও
অসহায়? কিন্তু কার কাছে?
পাহাড় বলল, আমার পুরো শরীরে ছোট
ছোট গর্ত। ইঁদুরের জন্য। আমার বিশাল
শরীরটা ওরা গর্ত খুঁড়ে খুঁড়ে ঝাঁজরা করে
দিয়েছে। তোমরা বরং ইঁদুরকেই
তোমাদের মা বানাও। কারণ সে
আমার চেয়েও শক্তপোক্ত।
পাহাড়ের বুকে এবার ইঁদুর খুঁজতে শুরু করল
দুই বোন। পেয়েও গেল। সবচেয়ে বড়
ইঁদুরটার কাছেই আবদার জানাল, প্রিয়
ইঁদুর, এই ছোট্ট শরীর নিয়েও তুমি কী
বিশাল পাহাড়ের গায়ে গর্ত করেছ। কী
ক্ষমতা তোমার! তুমি আমাদের মা হবে?
ইঁদুর বলল, হুম! তোমাদের মতো মেয়ের
মা হতে পারলে ভালোই হতো।
তোমরা ঠিকই বলেছ, ছোট্ট হয়েও বড়
পাহাড়ে আমি গর্ত খুঁড়েছি। কিন্তু আমরা
যে একটা প্রাণীকে বড্ড ভয় পাই?
কাকে? কাকে? জানতে চাইল দুই বোন।
ইঁদুর বলল, কাকে আবার! বিড়ালকে।
অবাক হলো দুই বোন। বলে কী ইঁদুর! কেন?
ইঁদুর বলল, সুযোগ পেলেই আমাদের ধরার
চেষ্টা করে বিড়াল। ধরে ধরে খায়।
ইঁদুররা বিড়ালের সঙ্গে পেরে ওঠে
না। বিশ্বাস করো, ইঁদুরের চেয়ে
বিড়ালই তোমাদের মা হওয়ার উপযুক্ত।
তোমরা বরং বিড়ালকেই বলো,
তোমাদের মা হতে।
ইঁদুরের কথা শুনে চুপ করে রইল দুই বোন।
দুই বোন বুঝতে পারল, ওদের যত্নআত্তি
করার জন্য আসলে বিড়াল মাকেই দরকার।
খুব অনুশোচনা হলো দুই বোনের।
শিগগিরই বাড়িতে ফিরে গেল। বলল,
আমরা ভুল করেছি মা। আমরা তোমার
চেয়েও শক্তপোক্ত মা চেয়েছিলাম।
আমাদের ভুল ভেঙেছে। আমাদের ক্ষমা
করো।
দুই মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বিড়াল
মা বলল, ওটা কিছু না। তোমরা আমার
অভাব বুঝতে পেরেছ, এতেই আমি খুশি।
আমি তোমাদের ক্ষমা করে দিলাম।
তারপর থেকে বিড়াল মায়ের সঙ্গেই
হেসে-খেলে দিন কাটাতে লাগল দুই
বোন।
(ইন্দোনেশিয়ার জাম্বি প্রদেশের
লোককথা)

No comments:

Post a Comment